বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের মাঝে সন্তোষজনক সেবা দিয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয় সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে রেকর্ড গড়েছে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজস্ব আদায়ে এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জরুরি বিভাগ থেকে ৭০ হাজার ৮৪৮ টাকা, বহির্বিভাগ (আউটডোর) থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩১১ টাকা, আন্ত:বিভাগে ভর্তিকৃত রোগী থেকে ৭৬ হাজার ৭২০ টাকা, এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪০ টাকা, ইসিজি পরীক্ষা থেকে ৩ হাজার ৫২০ টাকা, এক্স-রে পরীক্ষা থেকে ২৫ হাজার ৩৭৬ টাকা ও প্যাথলজি পরীক্ষা থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১০ টাকাসহ সর্বমোট ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬২৫ টাকা আয় হয়েছে। আয়কৃত এ টাকা গত জুন মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেছেন কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২৩ হাজার ২২৬ জন জরুরি রোগী, ৫ হাজার ৫৫৮ জন ভর্তিকৃত রোগী এবং ৫০ হাজার ৬৩২ জন বহির্বিভাগের (আউটডোর) রোগীসহ মোট ৭৯ হাজার ৪১৬ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। আর চলতি বছর ১৭ হাজার ২১৬ জন জরুরি রোগী, ৪ হাজার ৩১৭ জন ভর্তিকৃত রোগী এবং ৩৭ হাজার ২৩৮ জন বহির্বিভাগের রোগীসহ মোট ৫৮ হাজার ৭৭১ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার খয়েরবাড়ী গ্রামের শাহিনুর ইসলাম বলেন, গতবছর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। আজ আবারও চিকিৎসা নিতে এসেছি। এসে দেখি, হাসপাতালের পুরো চেহারাই পাল্টে গেছে। সব নতুন নতুন লাগছে। আগের তুলনায় এখানকার সেবার মানও অনেক ভালো হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাব রক্ষক মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬২৫ টাকা আয় হয়েছে। যা অন্য অর্থ বছরের চেয়ে অনেক বেশী।
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ‘ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথম রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব জমা হওয়া নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন ও উপজেলাবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের। আর এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায়। আগামীতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ১০ বেডের কোভিড-১৯ আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য জাইকা প্রকল্প থেকে “সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইচ্ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষ অনেকটা বিপদে পড়েই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। আর তাদের মধ্যে গরীব ও অসহায় রোগীর সংখ্যাই বেশি। ওইসব রোগীকে তাদের প্রত্যাশিত সেবা দিয়ে হাসিমুখে বাড়িতে পাঠানোই চিকিৎসক হিসেবে আমাদের পরম সার্থকতা। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান উন্নয়নে সকল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করছেন।থ সে কারণেই অন্য অর্থ বছরের তুলনায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
ডা. মো. মশিউর রহমান আরও বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সটি অনেক পুরনো। এর অনেক অংশ ভেঙে গেছে। জরুরি রোগী বহনকালে প্রায়ই এটি পথে নষ্ট হয়। ফলে রোগীরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নতুন একটি এ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দিলে এখানে সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা মহামারির মধ্যে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের সেবাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা খাত থেকে রেকর্ড রাজস্ব আদায় হয়েছে এটি অনেক ভালো দিক। জনবল সংকট থাকার পরেও এখানে আগের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবার সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।