লক্ষ্মীপুরে মেঘনার উপকূলীয় তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কমলনগর ও রামগতির জনপদ। চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারোও শুরু হয়েছে মেঘনা নদীর ভাঙন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর-রামগতি উপজেলার মেঘনা উপকূলে তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি বিদ্যালয় ভবন, বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রচণ্ড জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে ওই অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদ। প্রতিনিয়ত ভাঙনে নদীর তীরবর্তী ওই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ চরম আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
উপকূলের মেঘনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, এবারের ভাঙনের ভয়াবহতা বিগত সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। গত ১৫ বছরে লক্ষাধিক মানুষ মেঘনায় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে।
মেঘনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে কমলনগর ও রামগতিস্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ বছরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে।
এ বছরেও নদীগর্ভে বিলীন হওয়া রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়। নতুন ভবনটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করে প্রাথমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। নদীর তীব্র জোয়ারের আঘাতে ওই এলাকার একমাত্র এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। মেঘনার নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে ভাঙনের ভয়াবহতায়, মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে উপকুলে বসবাস করা মানুষের ঘরবাড়িসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমি।
নদীতে বিলীন হওয়া চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিম জানান, সম্প্রতি মেঘনার ভাঙন বিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি চলে এলে চেয়ার-টেবিলসহ মালপত্র সরিয়ে বালুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মঙ্গলবার সদ্যনির্মিত দোতলা ভবনটি মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়। এতে বিদ্যালয়ের ১৯১ জন ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ইউছুফ বলেন, ‘বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যালয়টি নতুন জায়গায় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।থ
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান জানান, উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আপাতত চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাপ্যতা বিবেচনায় সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, বিদ্যালয়টি রক্ষায় গেলো বছর বর্ষা কালীন সময়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর হঠাৎ ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় এটিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।