রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

লক্ষ্মীপুরের মরিয়ম ভিক্ষাপেশা ছেড়ে দিয়ে ছোট ছেলে মেয়ের বই বিক্রি।

মোঃ সোহেল হোসেন,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি। / ৪৬০ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১

লক্ষ্মীপুরের মরিয়ম ভিক্ষাপেশা ছেড়ে দিয়ে ছোট ছেলে মেয়েদের বই বিক্রি করে সংসার জীবনের হাল ধরেছে।লক্ষ্মীপুরে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ১২ বছর বয়সের মরিয়ম জৈনিক লুঙ্গির পরিহিত এক ব্যক্তির কাছে শিশুদের বই বিক্রির সময় আমারজমিন প্রতিবেদককে বলেন আমি ক’দিন আগে ভিক্ষা পেশা ছেড়ে বই বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছি। কৌতুহল হয়ে আমি একটা বই কিনতে চাইলাম।বইয়ের দাম করতেই বইয়ের দাম দ্বিগুণ দাম চাইল।
আমি তাকে বললাম বইয়ের দাম এতো দাম চাও কেন? উত্তরে সে নরম কণ্ঠে সে বলল-কিনতেন না কিল্লাই-কন? চার দিন আগে ভিক্ষা করা ছাড়ি দি এহন বই বেইচতাছি। ধন্যবাদ দেন আর আমনে ১টা বই কিন্না নেন। তখন ৪০ টাকার বই ৭০ টাকায় কিনলে সে খুবই খুশি হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর সরকারি হাসপাতালের সামনে মরিয়মের সঙ্গে কথা হয় আমারজমিন পত্রিকার প্রতিবেদকের সে তার কষ্টের কথা বলে কেঁদে ফেলে বলে আমার চিকিৎসার জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তি ও সরকারের কাছে সহযোগিতাও চেয়েছে।

মরিয়ম জানায়, তার বাবার বাড়ি ফরিদপুর শহরে। আর আম্মার বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকার ফকির বাড়ি। তারা দুইটি বোন ও একটি ভাই রয়েছে। সে সবার বড়। মরিয়ম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার খুব অসুখ (পায়ু পথে রক্ত ঝড়ে)। তার খুব কষ্ট হয়। তার মাকে কেউ সাহায্য দেয় না।মায়ে কইছে বাবার বংশে প্রথম ছেলে না হওয়ায় মাকে নানার বাড়িতে রাখি চলে গেছেন। আর ফিরে আসেন নাই। শুনেছি আব্বা আবার বিয়ে করেছেন। আমার মাও আরেক জনকে বিয়ে করেছেন। তিনি রিকশা চালান। ক’দিন আগে রিকশা চুরি হয়ে গেছে। এখন সবাই নানার বাড়িতে থাকেন। লকডাউনে স্কুল বন্ধ। ভিক্ষা করে যে টাকা পেতাম,তা দিয়ে ওষুধ কিনত আর ছোট দুই ভাই-বোনরে দিতাম।

মরিয়ম আরও বলেন, শুক্কুরবার (চারদিন আগে) রায়পুর শহরের বড় মসজিদের সামনে দাঁড়াই আছিলাম। এক বেডা আহি আমার বলে, কিছু বই কিনি দেই। সেগুলো বেচি টাকা লই তোমার মারে দিও। ভিক্ষা করিও না। হেইদিন থাকি ভিক্ষা ছাড়ি দি এহন হাসপাতালের সামনে ও বাজারে হাঁটি হাঁটি বই বেচি। হত্তেকদিন ৭/৮ বই ৫’শ-৬’শ টেকা বেচি। ৩’শ-৪’শ টেকা লাভ হয়-হেই টেয়া মারে নিয়া দি। কিন্তু রাস্তার মইদ্দে বড্ডা হোলারা খারাফ কতা কয়। আর খুব ডর লাগে। কেও যদি আঁরে অসুখের টেয়া দিতো। তাড়াতাড়ি বালা অই যাইতাম। এ সময় এক ব্যক্তি মরিয়মকে কিছু টাকা দিয়ে ভাত খেতে বললে, সে টাকা নিয়ে চলে যায়।

উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা গড়তে উপজেলা প্রশাসন ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলেও কখনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও সাবরীন চৌধুরি বলেন, শিশু মরিয়মের আগ্রহের কথা শুনে ভালো লেগেছে। ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে শিশু বয়সে বই বিক্রি করছে। আমি হতবাক হলাম। তাকে সহযোগিতা দেয়া হবে।ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর