লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় বিয়ের ১০ মাসের মাথায় বর্ধিত ৫ লক্ষ টাকা দাবীতে রুনা বেগম নামের এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড স্বামী আতাউর রহমান (৩০)’র বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি এরশাদুল আলম।
এর আগে গতকাল ২১ জুলাই ভোরে ঐ উপজেলার গোতামারী(ছিটমহল) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত গৃহবধূ রুনা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামী আতাউর রহমানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
আহত ওই গৃহবধূ উপজেলার পুর্ব সিন্দুর্না এলাকার মৃত রুহুল আমিনের মেয়ে। অভিযুক্তরা একই উপজেলার গোতামারী(ছিটমহল)এলাকার মৃত নুর ইসলামের ছেলে আতাউর রহমান (৩০), মোতাহার হোসেন (২৭) ও তার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫২)।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গেল বছর ৩১ সেপ্টেম্বর নগদ ৫ লক্ষ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্নলংকার যৌতুকের বিনিময়ে আতাউর রহমানের সাথে ঐ গৃহবধূ রুনা বেগমের রেজিষ্টারী মুলে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস পর আতাউর রহমান তার স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে চট্রগ্রামে পোশাক শিল্পকারখানায় কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়। কাজে গিয়ে নববধূ সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
এরপর গত ঈদুল ফিতরে আতাউর রহমান বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর চাপে তাকে সাথে নিয়ে চট্রগ্রামে চলে যায়। তারা চট্রগ্রাম যাবার পর আতাউর রহমান বিনা কারণে প্রায়ই সময় বাসার বাহির গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় থাকে। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ফলে আতাউর রহমান তার স্ত্রী রুনা বেগমকে গালমন্দ করে তার ভাইয়ের নিকট হতে আরও ৫ লক্ষ টাকা বর্ধিত যৌতুক আনতে বলে। বিষয়টি রুনা বেগম তার ভাইকে মোবাইল ফোনে জানায়।
গত ২০ জুলাই তারা স্বামী-স্ত্রী চট্রগ্রাম হতে বাড়িতে আসে। পরদিন রুনার ভাই বোনের বাড়িতে আসার খবর পেয়ে আতাউর রহমান অন্যান্য আসামীদের সাথে বুদ্ধিপরামর্শ করে রুনা বেগমকে তার ভাইয়ের নিকট হতে বর্ধিত আরও ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক নিতে বলে। কিন্তু রুনা বেগমের ভাইয়ের সাথে আরও লোক বোনের বাড়িতে যাওয়া বিষয়টি সে তার ভাই মোমিনুর ইসলামকে বলতে সাহস পায়নি।
রুনার ভাই মোমিনুর তার বাড়ি থেকে চলে যাবার পর রুনার উপর নানানভাবে নির্যাতন শুরু করে যৌতুক লোভী আতাউর রহমান। এমনকি ঐ রাতের মধ্যে ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে ঐ ৫ লক্ষ টাকা আনার জন্য চাপ ও অত্যাচার শুরু করে।
এতে রুনা বেগম রাজি না হলে ঐদিন রাত ১টা হতে ভোর ৬টা পর্যন্ত আতাউর রহমান তার ভাই ও মাকে বাড়ির বাহিরে পাহারা রেখে শুরু করে পাশবিক নির্যাতন। এমনকি তার দুই হাত দিয়ে হত্যা করার উদ্দেশ্যে রুনার গলা চিপে ধরে তাকে মারার উপক্রম করে। এতেও ক্ষান্ত না হলে পরে আতাউর রহমান তার ভাই ও মাকে ডেকে এনে রুনার হাত-পা চেপে ধরতে বলে। তারা রুনার হাত-পা চেপে ধরলে আতাউর রহমান রুনার মুখে তরল বিষ ঢেলে দিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। এতে রুনার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
রুনার চিল্লাচিল্লির গলা শুনে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে আতাউর রহমান নাটক করে সবাইক বলে রুনা নিজেই আত্মহত্যা করার জন্য বিষ খেয়েছে। পরে স্থানীয়রা রুনাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে দেয়। রুনা বেগম বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য আতাউর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, এবিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।