রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন

তাড়াশে বাঁশ শিল্প বিলুপ্তর পথে কদর বাড়াতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন।

মোঃ শাহিনুর রহমান,তাড়াশ(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি / ৬৩১ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের পল্লীতে বাঁশের শিল্প বিলুপ্তর পথে কদর ফেরাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে কারিগররা। বাঁশে তৈরী সামগ্রীর কদর না থাকায়  কারিগরদের জীবন চলছে দুর্বিসহ যন্ত্রনায়। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে এই শিল্পের ঐতিহ্য কমতে শুরু করেছে। কেন না বাঁশের তৈরি হস্ত শিল্পের পরিবর্তে মেশিনে তৈরি প্লাস্টিক সামগ্রীর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে গৃহিনীদের। তাই জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প।

ঠিক এমনটাই দেখা গেছে উপজেলার বিনসাড়া, গুণ্টা,বস্তুলসহ কয়েকটি গ্রামে।পুর্বে থেকেই আধুনিক মেশিনে তৈরী প্লাস্টিক সামগ্রী ও বর্তমানে‘ কোভিড ১৯’ করোনা ভাইরাসের কারনে এই শিল্পের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় কারিগরদের জীবন সংসার চালাতে হচ্ছে অনেক কষ্টে।

বাজারে এই পণ্য গুলোর কদর না থাকায় এই শিল্পের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠির লোকজন জীবন যাপন করছেন দুর্বিসহ যন্ত্রনায়। তাই অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য পেশায়। বাঁশ শিল্প আমাদের দেশীয় লোক সংস্কৃতি ও কারু শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে।  তাই দাবি সরকারী সহায়তা পেলে হয়ত ঘুরে দাড়াতে পারে এ শিল্পের সাথে জড়িত থাকা এই উপজেলার কারিগররা।

উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের পণ্য সামগ্রী বানানো চলছে। গ্রামীণ একটি পরিবারের বিভিন্ন বয়সী লোক এ কাজ করছেন। এই উপজেলায় বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে অন্তত ৮০ থেকে ১শ টি হিন্দু ও মুসলিম পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। চালনা, কুলা, ডালি, টোপা,পাখা, ঝুঁড়ি ,ঝাড়–,সহ চাঁই, টেটা, বৃত্তি ,খারি প্রভৃতি সামগ্রী তৈরী করছে বিক্রি করার জন্য।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত থাকা বিনসাড়া গ্রামের মৃত কোরবান আলীর স্ত্রী শিউলী খাতুন জানায়, আমরা এ পেশা করেই আমাদের সংসার চালাই। এই পরিবার গুলোর দরিদ্রতা আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। সব সময় অভাবে থাকি। বাঁশ শিল্প বদলাতে পারেনি আমাদের ভাগ্য। আমাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। গত কয়েক বছরে বাঁশের দাম অনেক বৃদ্ধি পয়েছে।

যেখানে একটা বাঁশ ১শত থেকে ১শত ৫০ টাকায় কেনা হত এখন তা ২ শত থেকে ২শ ৫০ টাকায় কিনতে হয়। ১টি বাঁশ দিয়ে ৩-৪ টি ঝুঁড়ি তৈরি করা যায়।  বাঁশের সামগ্রী বানানোর জন্য মুলিবঁাশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাঁশের উৎপাদন কমে গেছে। বাঁশ সংগ্রহ করে কাজ করা এখন বেশ কঠিন।

সারা বছরই বাঁশের তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পণ্য হাট বাজারে বিক্রি করা হয়। এগুলো বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে আমাদের সংসার।

শওকত আলীর স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, কাঠ ও বেতের পাশাপাশি আগে থেকেই বাঁশের জিনিস ব্যবহার করার অভ্যাস ছিলো বাঙালিদের। বাঁশ শিল্পের পন্য ব্যবহার করতো এই এলাকার মানুষজন । গ্রাম ও শহরে বাঁশের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিলো। বাঁশ দিয়ে প্রয়োজনীয় ও সৌখিন বিভিন্ন জিনিস বানানো হয়। কিন্তু বর্তমানে প্লাষ্টিক সামগ্রী থাকায় আমাদের এই জিনিস গুলোর কদর কমে গেছে। বর্তমানে আমাদের জিনিস গুলো বাজারে কম বিক্রি হওয়ায় আমরা অভাবে দিন কাটাচ্ছি।

ওই গ্রামের আরোও একজন বুলবুল আহম্মেদ বলেন, সারাদিন পরিশ্রম করে ২জন মানুষ ১০টা ডালি তেরী করতে পারি। ১টা ডালি ১শ টাকায় বিক্রি করি। ১০টা ডালি বিক্রি করে ১ হাজার টাকা পাই তার মধ্যে ৫শ থেকে ৬শ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে এলাকায় মাটি কাটার মেশিন ভেকু থাকায় এই ডালি বিক্রি হচ্ছেনা। আবার করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা এই কাজ কর্ম করছি না। তাই  আমাদের সংসার চালানো খুব কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই কাজের সাথে জড়িত থাকা লোকজনের জীবন চলছে ধুকে ধুকে।

এই ব্যাপারে বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোক্তার হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নের হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের মধ্যে হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের তৈরী করা জিনিসপত্র গুলো ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু এই সমস্ত হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পগুলি পৃষ্ঠ পোশকতার অভাবেই আজ বিলুপ্তি হতে চলেছে। তাই এই হস্ত শিল্প ও কুটির শিল্পের শিল্পীদের দাবী- যদি সরকারী ভাবে তাদেরকে সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে তারা তাদের ঐহিত্যবাহী নানা বৈচিত্রের সামগ্রী তৈরীতে আবারও মনোযোহী হয়ে উঠবে। সরকারী সহযোগীতা পেলে হয়তো এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারলে দেশের চাহিদা মেটনোর পর বাঁশের তৈরি সৌখিন পণ্য সামগ্রী বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন বিলুপ্ত শিল্পের প্রাণ ফিরে পাবে, তেমনি বহু বেকার পরিবারের কর্মসংস্থানের পথ উন্মেুাক্ত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর