লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন তেয়ারীগঞ্জ। তেয়ারীগঞ্জকে বলা হয় সদর উপজেলার পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এলাকা। করোনার দুর্যোগ কেটে গেলে ২০২২ইং সালে ঘোষণা হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফশিল।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থী ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
হাটে, বাজারে, চায়ের দোকানে, মাঠে-ঘাটে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই সাথে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকার প্রতিটি গ্রামগঞ্জে গণসংযোগ, মটর সাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রাসহ শো-ডাউন করতে চেয়েও করোনা পরিস্থিতির জন্য পারছেন না। যদিও দেশের করোনা দুর্যোগ কালীন মুহূর্তে লকডাউন বা শাটডাউন চলছে তবুও ভোটারদের মাঝে প্রার্থীদের বিষয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সাথে নিজের অবস্থান ও জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ । অনেকেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় লবিং শুরু করেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন ।
তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সহ অঙ্গসংগঠনের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ৪ জন, বিএনপি’র ২ জন। মামলার জটে পলাতক থাকায় সদর উপজেলার জামায়াতের দায়িত্বশীল কারোর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন জুড়ে জামায়াতের রয়েছে বড় অংকের ভোট ব্যাংক। জামায়াত অংশ না নিলেও তাদের ভোট জয় পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে বলে ধারনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আওয়ামীলীগ থেকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ওমর ইবনে হুছাইন ভুলু। মাঠে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আওয়ামীলীগের সদস্য ও তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ আফজাল হোসেন হাওলাদার, সদর উপজেলার আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মানিক।
তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি,সাধারন সম্পাদক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে (গত এক সপ্তাহ ধরে জরিপ চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্য মতে) এসব জানা গেছে।
বিএনপির প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশিদ। অপর আরেক নেতা নুর হোসেন নুরু মিয়া।
তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা গিয়াছে , যতই দিন যাচ্ছে ততই ভোটের আমেজ ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রার্থীদের মাঝে চঞ্চলতা কাজ করছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ সকল প্রার্থীরা অগ্রিম ব্যানার ফেস্টুন ও প্যানা বোর্ড ঝুলিয়েছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।
বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ইবনে হুছাইন ভুলু বলেন, দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ২০১৬ইং সালে সাধারণ জনগণের বিপুল ভোটের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি জন-সাধারনের পাশে থাকার। চেষ্টা করে চলেছি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করার। আগামী নির্বাচনে পুনরায় দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। মনোনয়ন পেয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করে একটি মডেল ইউনিয়ন পরিষদ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওবো।
উপজেলার আওয়ামীলীগের সদস্য প্রবীণ নির্যাতিত আওয়ামীলীগ নেতা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, সহায় সম্বল হারিয়েছি এমনকি আমার ছেলে হারিয়েছি। তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নকে মাদক, দুর্নীতি, দারিদ্রমুক্ত ও জবাবদিহিতা মূলক ইউনিয়নে পরিণত করতে হবে। সেই লক্ষে সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে আমি কাজ করে চলেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো এবং তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ইউনিয়নে পরিণত করবো ইনশাআল্লাহ।
সদর জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আফজাল হোসেন হাওলাদার বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। বিগত দিনে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন উন্নয়নে আমি নানা রকম কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ জনগণ আমার পাশে রয়েছে। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল আমার উপর আস্থা রাখবে বলে আমি মনে করি। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করবোও ইনশাআল্লাহ।
নৌকা প্রতীকের প্রাথী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কার ভুমিকা থাকবে এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আওয়ামীলীগের আহবায়ক মোঃ হুমায়ূন কবির পাটওয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তৃণমুল নেতৃবৃন্দের ভোটাভুটির মাধ্যমে বাছাই করা হবে। উপজেলার এবং জেলার ৬ জনের বোর্ড যে সকল নেতৃবৃন্দ তৃণমুল পর্যায়ে ভালো অবস্থানে থাকবে তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্র বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তথ্য নিয়ে গ্রহন যোগ্য ব্যক্তিকে নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন দিবেন, তিনিই প্রার্থী হবে বলে জানান।
করোনা দুর্যোগ কালীন সময়ে বিধিনিষেধ মেনে তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড, মিটিং, গণসংযোগ, ব্যানার, ফেষ্টুন, লিফলেট এর মাধ্যমে তাদের প্রচার প্ররোচনা শুরু করেছে।
বিএনপি’র প্রার্থীর বিষয়ে জেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সেন্ট্রাল কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাবুকে একাধিকবার মটু ফোনে করেও মতামত নেয়া যায়নি।
তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৯ নং ওয়ার্ড জনমত জরিপ করে জানা গেছে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ইবনে হুছাইন ভুলু ২৫%, আকতার হোসেন বোরহান চৌধুরী ২৭%,আফজাল হোসেন হাওলাদার ২৩%, মো:জহির উদ্দিন মানিক। ৯%, ভোটার সাপোর্ট করেন ।