সিরাজগঞ্জের চলনবিলের তাড়াশে ঢাকিদের জীবন চলছে দুর্বিসহ। “কোভিড ১৯ ” করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্বের মানুষ যখন স্তম্ভিত হয়ে পরেছে।
ঠিক সেখান থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশের খেটে খাওয়া অভাবী ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। এমন টাই দেখা গেছে উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামে বসবাসরত ঢাক ঢাকি বাজানো বাদ্যকর জনগনের চিত্র। বর্তমানে তারা অভাব ,অনাটনে বসবাস করছেন। ২ বছরের অধিক “কোভিড ১৯ ” করোনা ভাইরাসের কারনে সারা দেশের মানুষের পাশাপাশি তারা অসহায়ত্ব জীবন নিয়ে হতাশায় দিনাতিপাত করছেন।
এই পরিস্থিতিতে অন্য পেশায় নিয়োজিত মানুষদের কোন না কোন একটা কাজ কর্ম নিয়ে সংসার পরিচালনা করা কষ্টে হলেও চালাচ্ছেন। কিন্তু ঢাকিরা কোন ভাবেই চালাতে পারছেন না তাদের সংসার। তাদের সংসার চলতো বিয়ে, জন্মদিন, খেলাধুলা,পুজাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানে ঢাক ঢোল বাজিয়ে।
করোনা ভাইরাসের কারনে এলাকায় কোন ধরনের অনুষ্ঠান না থাকায় তাদের কোন আয় হচ্ছেনা বরং তাদের বাজানো যন্ত্রপাতি গুলো অকেজ হয়ে যাচ্ছে। বছরে শুধু সনাতন ধর্মের পুজা গুলোতে কটা দিন ঢাকের বোল তুলে ৮ থেকে ৮০ বছরের সকলের মনে আনন্দের ঢেউ তোলেন, কিন্তু তাদের সারা বছর দুবেলা দুমুঠো অন্য জোটে না।
ঢাকের বোল তুলে মানুষের মনে আনন্দ দান করলেও সারা বছর নিজেরা থাকেন নিরানন্দে। তাই আর্থিক অনটনে থাকায় তাদের অন্য পেশায় কাজ করতে গেলেও হিমর্শিম খেতে হয়।
পুজোর সময় দুটো পয়সা উপার্জন করলেও বছরের বাকি সময় গুলোয় পরিবার নিয়ে তারা থাকেন চরম অর্থকষ্টে। তাই এই সময় তাদের পরিবার তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। পুজোর ক’টা দিন কাঁধে ঢাক নিয়ে মন্ডপে মায়ের আরাধনায় ঢাক বাজিয়ে পুজোর সম্পূর্ণতা ফুটিয়ে তোলা ঢাকিরা পান ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
বাকী সময় চরম আর্থিক অনটনে দিন কাটে তাদের। অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত মানুষদের সরকারী বিভিন্ন বরাদ্দ আসলেও এই বাদ্যকর পেশায় থাকা মানুষ গুলো পায় নি সরকারী কোন সহায়তা। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগীতা পাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
বিনসাড়া গ্রামের ঢাকি শ্যামল বাদ্যকর বলেন, সরকার অন্যান্য বাদ্যকরদের শিল্পী ভাতা প্রদান করছেন। আমরা ঢাক বাজাই, আমরাও শিল্পী অথচ সরকার আজও আমাদের শিল্পীর মর্যাদা দেননি। স্থানীয় সরকার ইউপি চেয়ারম্যান কিছুটা ২/১বার সহযোগীতা করলেও বড় কোন সহায়তার জন্য কেউই ফিরে তাকাননি আমাদের দিকে। আরও অভিযোগ করে বলেন, ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেই এই ঢাকি পাড়ায় তখন আসেন অনেকেই। হাজারও আশ্বাসের বানী শুনে রাজনৈতিক নেতারা ভোট নিয়ে চলে যান। এভাবেই দিন যায়। আমরা সেই দুর্দশার মধ্যেই দিন কাটাই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের দিকে তাকিয়ে যেন সহযোগীতা করেন।
শ্রী গোপাল বাদ্যকর জানান, বিগত ২ বছর যাবত আমরা খুব কষ্টে আছি। শুনেছি সরকার বিভিন্ন জনকে সহযোগীতা করেছেন তবে আমাদেরকে দেন নাই। অনুষ্ঠানাদি না থাকায় আমরা অভাবে আছি। পারছি না জন বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাতে।
এ বিষয়ে বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোক্তার হোসেন বলেন, বিনসাড়া গ্রামের বাদ্যকরদের সংসার চলতো ঢাক ঢোল বাজিয়ে। বাপ দাদাদের আমল থেকেই তারা এই পেশার সাথে জড়িত। করোনার কারনে সকল কাজ কর্ম কমে যাওয়ায় তাদেরও কাজ কর্ম কমে গেছে। ফলে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আমি মাঝে মধ্যেই তাদের কিছু সহযোগীতা দিয়ে আসছি। এবার ঈদের সামনে আবারো সহযোগীতা দেওয়া হবে। তবে তাদের পূর্নবাসনের জন্য সরকারী সহযোগীতা করা প্রয়োজন।