একদা এখানে ছিলো ফসলের মাঠ, বসতবাড়ি, খেলার মাঠ, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যমুনার সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করতো নদী পাড়ের মানুষ গুলো। যমুনার অব্যহত ভাঙ্গনে পাল্টে গেছে এখান কার দৃশ্যপট। চার পাশে এখন শুধু পানি আর পানি। নদীর পাড় ভাঙ্গে বাড়ে যমুনার সীমানা। সেই সাথে বাড়ে সেখান কার মানুষের কান্না আর কষ্ট। যমুনা পাড়ের অসহায় মানুষের চোখের পানি আর নদীর পানি আজ একাকার।
সরেজমিন, উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের খাষ ঘুণি পাড়া ও খাষ তেবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শত শত একর ফসলি জমি, বহু ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা কবর স্থান ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে । অনেকেই তাদের ঘর বাড়ি গাছপালা সহ গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। তার উপর ১৪ পুরুষের ভিটেমাটি গিলে খাচ্ছে রাক্ষুসী যমুনা।
এদিকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা মাইঝাইল, খাষ ঘুণি পাড়া, খাষ তেবাড়িয়া, চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়, ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, মারমা, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া, উলাডাবের রাস্তা, বাজারঘাট ও ঘর বাড়ি যমুনার ও ধল্লেশ্বরীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
খাষ তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. দানেজ শেখ বলেন, ২ বছরে আমি ৬ বার বাড়ি সড়িয়ে নিয়েছি। এখন আমার যাবার মতো কোন জায়গা নেই। পয়পোলাপান নিয়ে কি করবো কোথায় যাবো।
স্থানীয় সার্জেন (অব:) আলতাব হোসেন বলেন, এবার পানি বাড়ার সাথে সাথে আমার বাড়ি ভেঙ্গে যায়। আমার মতো এমন অসহায় অবস্থায় আর জানি কেউ না পড়ে। যমুনার ভাঙ্গান থেকে খাষ ঘুণি পাড়া এলাকা রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩০ লক্ষ্য টাকা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রায় ৬৫ মিটার ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তেবাড়িয়া ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. রাজা মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডে ২ হাজার ৭ শত ৭৫ টি ভোটার আছে। এর মধ্যে অর্ধেক ভোটার এই নদী পাড়ের। যমুনার ভাঙ্গনের কারনে ঘরবাড়ি নিয়ে তারা একটু আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী মো. সোলায়মান ভূইয়া জানান, ভাঙ্গন রোধে সাময়িক ইমার্জেন্সি কাজ চলছে। তবে এটা কোন স্থায়ী সমাধান না। ভাঙ্গন রোধ ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের বিকল্প নেই বলেও তিনি জানান।