ত্রিশোর্ধ মনোয়ারা বেগম তার মেয়ে আয়শা বিবিকে নিয়ে দেড় কিলোমিটার দূরে বানাতি বাজারের কমিনিটি ক্লিনিক এলাকার একটি গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছাকাছি গভীর নলকূপ না থাকায় প্রতিদিন দুই বার ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। কেবল মাত্র মনোয়ারা বেগমই নয়, কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের বড় ৫নং গ্রামের মানুষের একই অবস্থা।কিছুদিন আগেও বেশকিছু গভীর নলকূপ সচল ছিলো।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কারনে এলাকার অধিকাংশ গভীর নলকূপ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে সাগর পাড়ের মানুষের।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়নে মোট তিন হাজার ৯২৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ১৫৯টি অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে।
এদের মধ্যে চাকামইয়া ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে৩২৬টি এবং অকেজো ১২টি, টিয়াখালী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩২ টি এবং অকেজো ২২টি, লালুয়া ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২৮৩টি এবং অকেজো ১৩টি, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২৪৮ টি এবং অকেজো ১০টি, নীলগঞ্জ ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৪১২ টি এবং অকেজো ১৩টি, মহিপুর ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২৫৯ টি এবং অকেজো ১৪টি, লতাচাপলী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৪৩১টি এবং অকেজো ১৫টি, ধানখালী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৩৫৫ টি এবং অকেজো ১৬টি, ধূলাসার ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ৩৪৬ টি এবং অকেজো ১৬টি, বালিয়াতলী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২৫৮ টি এবং অকেজো ৯টি, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২০৪ টি এবং অকেজো ৯ টি ও চম্পাপুর ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ২৭১টি এবং অকেজো ১০টি।
অপরদিকে বেসরকারি সংস্থা আবাস জানিয়েছে ভিন্ন চিত্র। তাদের জরিপের তথ্যানুসারে কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৭৫০ জন বাসিন্দার জন্য মাত্র ২৭২টি গভীর নলকূপ, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ১০ হাজার ৫৫৬ জন জনাসাধারনের জন্য ১১৩টি গভীর নলকূপ এবং চম্পাপুর ইউনিয়নের ১৫ হাজার ২০৮ জনের জন্য ১১৮টি গভীর নলকূপ রয়েছে। যাহা অত্র এলাকার জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। সংস্থাটি আরও জানান,এই সকল এলাকায় কৃষি জমির মধ্যে যেসকল খালের পানি এলাকাবাসী কৃষি, গৃহস্থালি এবং গবাধিপশু লালন-পালনে ব্যবহার করতো সেগুলোও অধিকাংশ ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত লবন পানির প্রবেশের কারনে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শহর এলকার মত এসব ইউনিয়ন ও গ্রামাঞ্চলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুর, খাল, বিল এবং জলাশয়ের দূষিত পানি ব্যবহার করছেন।
ফলস্বরূপ নানান রোগ বালাই যেমন- ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা এবং চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। আর চলমান বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংকট এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রায় প্রতিদিনই এসব এলাকার জনসাধারনকে ডায়রিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও উপজেলা সদর হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো.জিহাদ হোসেন বলেন, ঘূর্নিঝড় ইয়াসের জোয়ারের প্রভাবে কিছু নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ওয়াস করে তা ঠিক করা হয়েছে।