দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ১৩তম গ্রেডের বেতন বঞ্চিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার টালবাহানা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্তরে এই অবস্থান কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন উপজেলার প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষক।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অনিয়ম ও টালবাহানার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকারী বর্ধিত বেতনের অংশ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এ ঘটনায় বঞ্চিতদের মাঝে অনেকটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবহিত করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এই অবস্থান কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা: হাসিনা ভূইয়া বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচশ শিক্ষক রয়েছে। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের উন্নিত গ্রেড-স্কেল পাওয়ার দাবীতে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী দেশের সকল বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে উন্নিত করার নির্দেশ দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অন্যান্য উপজেলায় ১৩ তম গ্রেডের কাজ সমাপ্ত হলেও এ উপজেলায় শেষ হয়নি। শিক্ষকরা তাদের এই সমস্যার কথা আমাকে জানালে বিষয়টি নিয়ে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি তিনি জানিয়েছেন কিছু কাজ হয়েছে বাকি গুলো চলমান রয়েছে,কাগজের জটিলতার কারনে সময় লাগছে।
ফুলবাড়ী প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহব্বায়ক এস কে মোহাম্মদ আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলিমসহ ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর দিনাজপুর জেলার অন্যান্য উপজেলায় ইতিমধ্যে ১৩ তম গ্রেডের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে এবং উপকার ভোগীরা এর সুফলও পাচ্ছেন অথচ ফুলবাড়ী উপজেলার সকল শিক্ষকরা তাদের উন্নিত গ্রেড পেতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিলেও তিনি নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করছেন।
অবস্থান কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার অফিসে গেলে তিনি তাদের সাথে অসাদাচারন করেন এবং তিনি কারও নির্দেশ পালন করতে বাধ্য নয় বলেও জানান। উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার হয়রানির শিকার শিক্ষকরা টাকা ছাড়া সেখানে কোন কাজ করতে পারেননা। বলা যায় উপজেলা হিসাব কার্যালয়টি এক প্রকার দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি ওই কর্মকর্তার একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে গ্রেড উন্নতির কাজের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে এক হাজার টাকা করে ঘুষ দাবী করেন। ওই চক্রের দাবী না মানায় দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা এমনটিই তাদের বক্তব্যে জানান। তাই দূনর্ীতিবাজ ওই কর্মকর্তার অপসারন দাবী করে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন এর হস্তক্ষেপে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষকরা।
এসব বিষয়ে, জানতে চাইলে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফাতেমা জোহরা বলেন,শিক্ষকদের এসব অভিযোগ মিথ্যে,ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তিনি কখনই কোন শিক্ষকের কাছে টাকা দাবী করেননি,তার অফিসের কেউ যদি টাকা চেয়ে থাকেন সেটিও তাকে জানাননি শিক্ষকরা। তিনি বলেন,উপজেলার ৪৮২টি শিক্ষকের বইয়ের মধ্যে তার অফিসে জমা হয়েছে ১৮০টি বই। এরমধ্যে তিনি ৭০টি বইয়ের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন,৬০টি বইয়ের কাজ চলছে এবং ১০৩টি বইয়ের সমস্যা থাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে, বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন জানান,প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেডে উন্নিত করণের বিষয়ে যে জটিলতা তৈরী হয়েছিল এটি ভূল বোঝাবুঝির কারনে হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে এবং শিক্ষকরাও তাদের বর্ধিত বেতনের অংশ পাবেন বলে জানান তিনি।