দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার অদূরে বাসুদেবপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন তার নিজের প্রচেষ্টায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকের সুবিধার জন্য একের পর এক সময় সাশ্রয়ী বিভিন্ন কৃষি কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন । এর ফলশ্রুতিতে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।
আনোয়ার হোসেন এবার তৈরি করেছেন ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিনের সহযোগী মেশিন। এই মেশিন দিয়ে কৃষকরা হারভেষ্টার মেশিন থেকে স্বল্প খরচে ধান পরিবহণ ও বস্তাজাত করতে পারছেন।
জানা গেছে, ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়। তাই কৃষকদের কাটা মাড়াই সুবিদার্থে কৃষি দপ্তরের অধিনে ভুর্তকি মূলে ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য অত্যাধনিক হারভেষ্টার মেশিন সরবরাহ করেন। ওই হারভেষ্টার দিয়ে কৃষকরা দ্রুত সময়ে জমির ধান কাটা ও মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় একটি মেশিনে ধান সংগ্রহের ধারণ ক্ষমতা থাকে ২৫ মন। কাটা মাড়াইর পর জমি থেকে কৃষকের সুবিধা জনক স্থানে ওই ধান আনলোড কিংবা বস্তাজাত করতে গেলে সময়ের প্রয়োজন এবং হারভেষ্টারের জ্বালনী খরচ ও রক্ষণা বেক্ষণ খরচ অনেক বেশী।
আবার জমি থেকে কৃষক ওই ধান বস্তা জাত করতে লেবার ব্যবহার করলে তার খরচও অনেক বেশী। এই চিন্তা ধারা থেকে কৃষক আনোয়ার উদ্ভাবন করেছেন হারভেষ্টা সহযোগী একটি পরিবহণ যন্ত্র। যা দিয়ে এক একর জমির ধান হারভেষ্টার থেকে কৃষকের সুবিধাজনক স্থানে পরিবহণ করতে সময় লাগে কম এবং খরচ হয় মাত্র ৬ থেকে ৭ শত টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমি ধান শ্রমিক দিয়ে পরিবহণ করতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা।
উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন জানান, তিনি চলতি বছর সাড়ে ৭ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছে। ধান কাটা মাড়ার আধুনিক যন্ত্র হারভেষ্টার দিয়ে ভাড়ায় ধান কাটা মাড়াই সম্ভব হলেও জমি থেকে ধান পরিবহণের সমস্যা। তাই তিনি আনোয়ারের উদ্ভাবিত হারভেষ্টার সহযোগী যান দিয়ে ধান পরিবহণ করছেন। তাতে তার সময় কম লাগছে এবং খরচ কম হচ্ছে।
উপজেলার হরগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত দেখতে এসেছেন ধান কাটা মাড়াই ও পরিবহণ ব্যবস্থার। তিনি জানান এভাবে ধান কাটা মাড়াই ও পরিবণ করলে আমাদের খরচ সাশ্রয়ী হবে।
বাসুদেবপুর গ্রামের ২টি হারভেষ্টারের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা লিখন জানান, তিনি সরকারের ভুর্তকিতে দু’টি হারভেষ্টার নিয়েছেন। কিন্তু হারভেষ্টা দিয়ে ধান কাটা মাড়াই দ্রুত হয়। তবে পরিবহনের ক্ষেত্রে হারভেষ্টারের রক্ষণা বেক্ষণ ও জ্বালানী খরচ অনেক বেশী। সব মিলে কৃষকের কাছে হারভেষ্টরের ভাড়া বেশী চাইলে কৃষকেরও সমস্যা। তাই আনোয়ারে তৈরি হারভেষ্টর সহযোগী যান ব্যবহার করলে কৃষক উপকৃত হবে। আরো ভালো হয় সরকার হারভেষ্টরের সাথে এই সহযোগী যানও যদি ভুর্তকিতে কৃষকদের সরবরাহ করতে পারেন।
উদ্ভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, সরকার কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্য দিয়ে ধান কাটার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন কিনছে। কিন্তু এ হার্ভেস্টার মেশিনের ধান সংগ্রহের ভান্ডারটি তুলনা মূলক ছোট হওয়ায় ১০/১৫ মিনিট পর পর ধান আনলোড করতে হয়। এতে যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়। একইসাথে ধান আনলোড করতে রাস্তায় কিংবা শুকনো উঁচু জমিতে যাতায়াত করতে হার্ভেস্টার মেশিনের তেল খরচ ও রক্ষণা-বেক্ষণ খরচ অনেক বেশি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ধানের জমি থেকেই ধান সংগ্রহের বিকল্প হিসেবে এই সহযোগী মেশিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, হার্ভেস্টার সহযোগী মেশিনটি ধান পরিবহন ছাড়া, জমি চাষ করা, হার্ভেস্টার মেশিনকে পরিবহন করা, ধানের বস্তা পরিবহন ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করা যায়।
আনোয়ার হোসেন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করলে আমি এই সহযোগি যন্ত্রটি কৃষকের ঘরে ঘরে পেঁৗছে দিতে পারব। এতে কৃষক কম খরচেই স্বল্প সময়ে জমি থেকে ধান ঘরে তুলতে পারবে। অন্য সময় ওই যন্ত্রের মাধ্যমে জমি চাষ করতে পারবে এবং হারভেষ্টার পরিবণ করতেও পারবে। যন্ত্রটির মূল্য সম্র্পকে তিনি বলেন প্যাকেজ হিসেবে এর মূল্য সাড়ে ছয় থেকে সাত লক্ষ টাকা মাত্র।
প্রসঙ্গত আনোয়ার হোসেন ২০১৪ সালে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্বাইড হারভেষ্টার মেশিন তৈরি করে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তার তৈরী কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনের মূল্য মাত্র আট লাখ টাকা। অথচ বিদেশ থেকে এই মেশিন আমদানি করতে খরচ হয় অনেক বেশী।