নদী বিধৌতা প্রমত্ত যমুনা নদী বিভক্ত করেছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের ০৬টি ইউনিয়নকে। এপারের ০৩টি ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন। ওপারের ০৬টি ইউনিয়ন প্রতি বছর বন্যায় রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে কৃষি শস্য ভান্ডার খ্যাত চরাঞ্চলের মানুষ রাস্তা ঘাটের অভাবে চলাচলসহ পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হত।
এভাবেই জীবন-যাপনে অভ্যস্ত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা চরের ৬ ইউনিয়নের পৌণে দুই লাখ মানুষ। গত এক দশকের মধ্যে কিছু পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর বন্যার ছোবলে বারবার ওই রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের সেই দুঃখ দুঃদশার্ দূভোর্গ হ্রাস করার লক্ষে চলতি ২০১০-২১ইং অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামোগত (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় কাজিপুরের সাংসদ প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের (এমপি বরাদ্দ) উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজীর মাধ্যমে যথাযথ ব্যবহারের ফলে টেকশই উন্নয়ন পরিকল্পনা মাফিক রাস্তা-ঘাটের প্রভুত উন্নত সাধিত হয়েছে। তারপরেও এই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্যে এ বছর নেয়া হয়েছে বেশ কিছু প্রকল্প। তারই ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র মনসুর নগর ইউনিয়নেই ১০ টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, কাজিপুরের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন যমুনার চরে অবস্থিত ছয়টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট নির্মাণে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। টিআর, কাবিখা, কাবিটা’র মাধ্যমে এই প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর নির্মিত মাটির রাস্তাগুলো বন্যার লেভেল থেকে উঁচু করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তাগুলো টেকসই হবে, জনগণের পণ্য পরিবহন ও চলাচলে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে মনসুর নগরের দশটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কাজ আশিভাগ শেষ হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে টিআর বরাদ্দ ১৯ লক্ষ টাকা আর কাবিখার মাধ্যমে ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বুধবার (১৯ মে) উপজেলার মনসুর নগর, চরগিরিশের ৮ টি এবং নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৪ টি চলমান রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ঘুরে দেখেন কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। এসময় তিনি জানান,নাসিমের মতো এমপি তানভীর শাকিল জয় কাজিপুর বাসীর নিবেদিত প্রাণ তার নির্দেশে রস্তাঘাট নির্মাণে দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাকর্মীরা শতভাগ কাজের সভলতা অর্জন করেছে। শুধু সরকারী বরাদ্দ নয়, এলাকার নেতাকর্মিগণও নিজেদের টাকায় এই কাজে সহায়তা করছে। ইউনিয়নের সকল রাস্ত-ঘাটই এখন দৃশ্যমান। চরবাসির একটা স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে।
মনসুর নগর ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, এমপির সকল বরাদ্দ উন্নয়নমূলক কাজে শতভাগ ব্যবহার করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায়। এতে প্রয়োজন হলে কোন দলীয় নেতাকর্মীরাও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করব। ইতিপূর্বে এই রাস্তা-ঘাটগুলো হওয়াতে জনগণের যাতায়াতে অনেক সুবিধা হবে।
এছাড়াও সহসভাপতি কামাল উদ্দিন মাস্টার জানান, আমাদের ইউনিয়নে এবার ৪ টি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের জন্যে আমরা নিজেরা বিনে পয়সায় জায়গা দিয়েছি। একটি প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল আওয়াল লেবু সরকার জানান আমাদের এলাকার উন্নয়নের সার্থে এই রাস্তায় নির্ধারিত বাজেট ব্যবহার করার পরেও নিজেরা অর্থ দিযে সহযোগীতা করেছি। এই রাস্তাট হওয়ার ফলে এলাকার আত্মসামাজিক ব্যবস্থা পাল্টে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একে এম শাহা আলম মোল্লা জানান, ‘ বন্যার লেভেল থেকে উঁচু করে এই রাস্তাগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান,এবারই প্রথম ফ্লাড লেভেলের চিন্তা করে চরের ছয় ইউনিয়নে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে চরে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ। এছাড়া আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন রাস্তাগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে চরের চেহারাই পাল্টে যাবে।
মনসুর নগর ইউনিয়নের ছালাল গ্রামের জয়নালের পুত্র ইছহাক উদ্দিন জানান, এই রাস্তাগুলো হওয়ার ফলে যানবাহন নিয়ে ছালাল থেকে শালদহ, শালগ্রাম হয়ে সরিষাবাড়ী পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। শালদহ গ্রামের সোনারুদ্দিনের মেয়ে আখি আক্তার জানান, আমার বিয়ে হয়েছে সরিষাবাড়িতে, আগে রাস্তার অভাবে আমাকে হেটে আসতে হত, এখন রাস্তা হওয়ার কারণে যানবাহনে করে যাতায়াত করতে পারি, এতে আমরা খুব খুশি।