জালাল উদ্দিনঃ গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেনীর সদর কালীদহ গ্রামের মৃত আলি আহম্মদ ভূইয়া বাড়ীর শহীদুল ইসলামের মেয়ে কিশোরী তানিশা ইসলাম (১১)কে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তার জেঠাতো ভাই আক্তার হোসেন নিশান (১৭)। ৮ মে শনিবার দুপুর ১২টার সময় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী।
তিনি জানান, ব্যক্তিগত জীবনে নিশানের বাবা জীবিত না থাকায় তানিশার পরিবার তাদের কথায় কথায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। এ আক্রোশের জেরে রাগে-ক্ষোভে সে তানিশাকে হত্যা করে।
তবে তানিশা ও ঘাতক নিশানের ফুফু কামরুন নাহার রবিবার( ৯মে)সকালে ফেনীর শক্তিকে জানায়, পুলিশের কাছে দেওয়া নিশানের জবানবন্দি সত্য নয় ৷নিশানের মায়ের সাথে আমার ভাইয়ের বিবাহ হয় পাকিস্তানে৷ বিবাহের পাঁচ মাস পর আমার ভাই মৃত্যুবরণ করলে নিশানের মা পাকিস্তান থেকে তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট চলে আসেন৷ নিশানের জন্মের তিন বছর পর তিনি নিশানকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলে আমার মা তাদেরকে পারিবারিক স্বীকৃতি ও বাড়িতে আশ্রয় দেন ৷ তানিশার বাবা শহীদুল ইসলাম তাদের ভরোন পোষনের দায়িত্ব নেন এবং পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত তার নিজ ঘরে নিশানদের থাকার ব্যবস্থা করেন৷আমার মা ও তানিশার বাবা ও আরেক ভাই সবুজসহ আমরা নিশানদের জন্য টিনের ঘর নির্মানের ব্যবস্থা করে দেই৷পরবর্তীতে তারা সেখানে বসবাস শুরু করে৷
পারিবারিক ভাবে পৈতৃক সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ নিশানদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷ আমার প্রবাসী দুই ভাই গিয়াসউদ্দীন সবুজ ও শহীদুল ইসলাম (তানিশার বাবা) নিশানদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন ৷ নিশান যে পারিবারিক অবহেলার কথা বলেছে এটা মোটেই সত্য নয় ৷ নিশানদের সাথে আমাদের বেশ পারিবারিক মিলমিশ ছিল৷
তিনি আরও বলেন, নিশান কিছুটা বখাটে৷গত কয়েক মাস পূর্বে তানিশাদের ঘরে চুরি হয়৷ ঘরে থাকা তিনটি আলমারির যেটিতে অর্থ ও গয়না ছিল সেটি ভেঙে নগদ ২ লাখ টাকা ও ১৫ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়৷ উক্ত ঘটনার পর নিশানদের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন দেখে নিশানদের সন্দেহ করা হয়৷ কেননা নিশানরা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছলও এই ঘটনায় তাদের সন্দেহ করা হলেও পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশংকায় নিশানদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না ৷ এরপরেও বেশ কয়েকবার চুরির ঘটনা ঘটে। এমনকি তানিশা হত্যার দিনও তাদের ঘর থেকে ২০ হাজার টাকা ও চারটি স্বর্ণের আংটি চুরি হয় ৷ যা পরেরদিন বাড়ির আমগাছতলায় পাওয়া যায়৷ পরিববারের দাবী চুরি করতে দেখে ফেলায় তানিশাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে নিশান৷
তারা আরও দাবী করেন এই হত্যাকান্ডে নিশান একা নয় তার সাথে অন্যকেউ জড়িত আছে ৷ নিশানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে ৷
নিহতের ফুফু আক্ষেপ করে আরও বলেন, আমার জানা মতে পিতাহীন নিশানকে আমার প্রবাসী দুই ভাই নিজের সন্তানের মতো মানুষ করার চেষ্টা করতেন ৷ তারা নিশানকে একটি মাদ্রাসায়ও ভর্তি করিয়ে দেন৷ কিন্তু নিশান বখে যায়৷ আমার ভাইয়েরা এতদিন দুধলা দিয়ে সাপ পুষলেন! নিশান যদি এতদিনের স্নেহ ও দয়ার অস্বীকার করে হত্যার মিথ্যা কারন হিসেবে পারিবারিক অবহেলাকে দর্শায়, তবে আমি পুলিশ ও সাংবাদিকদের এলাকায় এসে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ স্থানীয়দের নিকট সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানাচ্ছি ৷
সর্বেশষ নিহত তানিশা ও ঘাতক নিশানের ফুফু কামরুন নাহার জানান, শ্রীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করে বখে যাওয়া নিশানের প্রকৃত সত্য জাতিকে জানিয়ে দেওয়া হবে৷
নিহত তানিশার চাচা গিয়াসউদ্দিন সবুজ, পিতা শহীদুল ইসলাম, বড় ভাই ও মামলার বাদী আশরাফুল ইসলাম তানিশার হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন৷