লক্ষীপুর বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে জমিগুলো অনুর্বর হয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক ঝুঁকি বাড়ছে। এরপরও মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করে চলেছে প্রশাসন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর অংশ কেটে ট্রাক-ট্রলি করে মাটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এসব মাটি যাচ্ছে প্রায় ২০টির ও বেশি ইটভাটায়। তাছাড়া বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজেও মাটির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ২ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
অথচ ২০১৩ সনের ৫৯ নং আইন ৫(১) ধারাই বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসাবে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন না।
কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশেই যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। এই অংশটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর প্রাণ থাকে না। এমনকি ওই জমিতে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কোনো ফসল বেড়ে উঠবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
জানা যায়, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে।
অন্যদিকে, চলাচলে নিষেধ থাকলেও মাটি ভর্তি ভারি ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
ইটভাটার এক তত্ত্বাবধায়ক জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের ইটভাটার মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাটা মালিকরা কেউ টপ সয়েল কাটায় সরাসরি জড়িত নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এসব জমির মাটি সরবরাহ করছেন ইটভাটায়।
নাম না প্রকাশে এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, আগে আমার জমিতে যা ধান উৎপন্ন হত তা দিয়ে আমার পরিবারের সারা বছরের আয় হয়ে যেত। পাশের জমির মাটি কাটার ফলে আমার জমি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমার জমির ও মাটি কেটে ফেলি। এখন আমার জমিতে ৬ মাস ফসল উৎপাদন হয় যা আগের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে চরম ভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ায় ফলমূল ও ফসলের উপর বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
কৃষি জমির মূল্যবান এই মাটি ‘টপ সয়েলথ কেটে নিয়ে গেলেও উপজেলা কৃষি প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করে চলেছে। ফসলি জমির টপ সয়েল বিনাশের কারনে ফসলি জমির ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংগাখাঁ ইউনিয়নের প্রায় সকল এলাকায় জমি থেকে প্রায় ২-১০ ফুট গভীর কূপ খনন করে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাছাড়া এই মাটি গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে পরিবহণ করার ফলে সড়কে মাটি স্তর জমার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে সড়কগুলো মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে।