শিল্পপতিদের বহুগামী নতুন কিছু নয়। তারা আধা বুড়া বা বুড়া হওয়ার পরেও ঘরে স্ত্রী, সন্তান এমনকি নাতি-নাতনি রেখেও কচি সুন্দরী মেয়ে পোষে বছরের পর বছর। কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে তার যৌবন ফুরিয়ে যায়, বুড়ি হয়ে গেলেও তার কপালে বিয়ে কিবা সন্তানাদি জোটে না, সংসার জোটে না। আবার কোনো কোনো নারী চুক্তিতে বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে সম্পর্ক বৈধ হলেও নারীর স্বার্থ জিরো। চুক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র ভরণপোষণের বিনিময়ে দেহ ভোগ চলে। চুক্তিশেষে চুক্তি মূল্য পরিশোধ করা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্যও পাওয়া যায়না। দুরাশা করতে করতে সময় ও স্বার্থ কেবলই ফুরিয়ে যায়।
সম্প্রতি অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোশারাত জাহান মুনিয়া নামের এক সুন্দরী তরুণীর আত্মহত্যার (নাকি হত্যা?) বিষয়টি দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইসলামী শরিয়া বিরোধী ছিলো, বিবাহবহির্ভূত, সম্পন্ন অনৈতিক যৌনাচার করেছে ওই পুরুষ ও তার নারী সঙ্গীনী। অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আহমেদ সোবহান আনভীর। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি হওয়ার কারণে কেউ বিষয়টিকে আমলে নিতে চাচ্ছে না। যদিও এতে বিভিন্ন কারণ নিহিত আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য কারণ দুটি হলে- ১. তাদের অঢেল টাকা ও ২. গণমাধ্যমের জন্য বিজ্ঞাপন। গণমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে তাদের হীনমন্যতা ও সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছে। যেমন চ্যানেল আই তাদের অনলাইনে প্রকাশিত একটি ছবিতে আনভিরের ছবি ফ্যাকাসে করে দিয়ে মেয়েটিকে প্রদর্শন করেছে।
নীতিনির্ধারক, প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তি, রাজনৈতিক সাপোর্ট নিতে যেমন টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে তেমনি সংবাদমাধ্যমের জন্য রয়েছে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা। এতে করে নিরীহ অসহায় মেয়েটির ভাগ্যে শেষতক ন্যায় বিচার জুটবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে দেশের সাধারণ জনগণ।
বসুন্ধরা কোম্পানি কিভাবে মিডিয়ার মালিক হয় তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় যতদূর জানা যায়- তাদের প্লট-ফ্ল্যাট জমি বিক্রির প্রচুর বিজ্ঞাপন যাচ্ছে প্রথম আলোতে। এদিকে ঢাকার কলাবাগান এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে একজনকে গুলি করে হত্যা করে বসুন্ধরা কোম্পানির পোষা সন্ত্রাসীরা। এ খবর তৎসময়ে কোন গণমাধ্যমে তেমন ছাপা না হলেও প্রথম আলো পত্রিকা হত্যার সংবাদ চাপে এবং আদালত পর্যন্ত ফলোআপ চেপেছিল। এই সংবাদকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো পত্রিকায় বসুন্ধরার বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম আলো তখন স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে এমন একটি খুনের সংবাদ প্রকাশ করে। এই সংবাদের জেরে বসুন্ধরা তখন বিশাল ঝামেলার মধ্যে পড়েছিল।
এরপর থেকে বসুন্ধরা কোম্পানি আনভীর সাথে তখনকার অখ্যাত সংবাদকর্মী নঈম নিজামের বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ তৈরি হয়। এই নঈম নিজাম পরবর্তীতে ফুঁসলিয়ে, প্রথম আলোর বিষাদগার করে বসুন্ধরাকে গণমাধ্যমে নিয়ে আসে।
কালের কণ্ঠের অফিস বসুন্ধরা সিটির আন্ডারগ্রাউন্ডে শুরু করে। সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন দেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক আবেদ খান। ড্যামি পত্রিকা হচ্ছে। এতেই সাংবাদিক আবেদ খান বুঝে গেলেন কোম্পানি কি কারনে, কেন গণমাধ্যমে প্রবেশ করেছে, কি তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আবেদ খান পত্রিকা থেকে অল্পসময়ের মধ্যেই সরে যান। উপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সাপ্তাহিক আয়োজন পাঠক ফোরাম পাতার পরিচালক। সেখান থেকে কালের কণ্ঠে প্রবেশ করেন ‘সম্পাদক শূন্য পত্রিকা’র ভারপ্রাপ্ত পরবর্তীতে সম্পাদক হিসেবে চেয়ারপ্রাপ্ত হন ইমদাদুল হক মিলন।
নঈম নিজামের বুদ্ধিতে কম পয়সায় আরেকটি দৈনিক খোঁজাখুঁজি করে এক ভদ্রলোকের পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন পান। তিনি পত্রিকাটা তেমন চালাচ্ছিলেন না বা সময় দিতে পারছিলেন না বলে পত্রিকাটা নিয়মিত বের হচ্ছিল না। মাগনা পত্রিকা নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ শাহজাহান সরদারকে সম্পাদক করে ১২ পৃষ্ঠার বাংলাদেশ প্রতিদিন রাজধানীতে এক টাকা, রাজধানীর বাইরে দুই টাকা করে পাঠকের কাছাকাছি আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কয়েক মাসের মধ্যেই যখন মূল থিম শাহজাহান সরদার বুঝতে পারেন তখনই পত্রিকা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। সংবাদকর্মী থেকে নঈম নিজামের জন্য আসে ‘সম্পাদক’ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এরপর বসুন্ধরা এক এক করে ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সান, বাংলা নিউজ, রেডিও ক্যাপিটাল, টিভি চ্যানেল নিউজ২৪ মাধ্যমে তাদের গণমাধ্যমে আসার মনোবাসনা পূর্ণ করে যাচ্ছে।
প্রকৃত সংবাদ ও সাংবাদিকতা ক্রমশ এই সব মিডিয়ার রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের অভিজাত এলাকায় মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে মাসিক ১লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়ায় শয্যাসঙ্গিনী করে রেখে বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার করেছে সেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আহমেদ সোবহান আনভীর। যার বয়স চল্লিশের কোঠা পেরিয়েছে অনেক আগেই। সে কিনা একটা কলেজছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে, লোভ দেখিয়ে, রঙিন স্বপ্নের হুল ফুটিয়ে শুধুমাত্র শয্যাসঙ্গিনী করেছে। সে শুধু দেহ খেলায় উন্মুক্ত রইলেও মেয়েটিকে কোন স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি নারীলোভী আনভীর। রাজনৈতিক নেতা, শিল্পপতি, টাকাওয়ালারা ঘরে যত সুন্দরী পরীই থাকুক না কেনো, তারা বাহিরে আলাদা করে নারী পোষা যেন রীতিমতো সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও এসব নারীদের বিভিন্ন উপায়ে জিম্মি করে, ব্ল্যাকমেইল করে তাদের দিয়ে অসৎ মনোবাসনা পূরণ করে নরপিশাচরা।
মোসারাত জাহান মুনিয়াকে তানভীরের মা বলেছিল-‘সে যেন ঢাকা ছেড়ে যায়। আনভিরের সাথে যোগাযোগ না রাখে। যদি এর ব্যত্যয় হয় তাহলে তাকে হত্যা করা হবে।’ এমনটি আনভিরও বলেছিল যে -‘তার মা খুব খারাপ প্রকৃতির। মুনিয়াকে যেকোনো সময় হত্যা করতে পারে।’ আদতে মুনিয়া আত্মহত্যা (বা হত্যা) করেছে!
আনভিরের সাথে মুনিয়ার অবৈধ সম্পর্কের ফাটল ধরে মুনিয়াকে যে বাড়িতে ভাড়া করে রেখেছিল আনভির, সে বাড়িওয়ালার ইফতারে অংশগ্রহণ করেছে মুনিয়া। বাড়িওয়ালা মোবাইলে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করার পর সে ছবি আনভির তার বন্ধুর মোবাইলে দেখতে পায়। এতে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। তারপর বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে আনভির মেয়েটিকে ৫০ লাখ টাকা চুরি করেছে মর্মে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে।
যখন মুনিয়ার সাথে আনভিরের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে তখন সে তার বোনকে বিষয়টি জানায়। আনভির তাকে শুধু ব্যবহারই করেছে বিনিময় কোন স্বীকৃতি দিতে নারাজ এবং চুরির কলঙ্ক তাকে দিয়েছে বলেও মুনিয়া বোনের কাছে কান্নাকাটি করে। পরবর্তীতে রশিতে ঝুলানো মুনিয়াকে তো দেশবাসী দেখতে পায় গণমাধ্যমে।
ঘটনার আড়ালে বহু ক্লু থাকলেও আইন বিচার ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকার্য পরিচালনা করবে। একটি মাত্র ক্লু হচ্ছে মোবাইল ফোনে মুনিয়াকে অতিরিক্ত মানসিক চাপ দেয়া, আত্মহত্যার প্ররোচনা করায় তার বোন নুসরাত বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলা (নং ২৭) শুধুমাত্র আনভীরকে বিবাদী করা হলেও আদালত বিচার কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে আনভিরের বিদেশযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার সমূদয় কাগজপত্র বিমানবন্দর পাঠিয়েছে। এদিকে আনভিরের পক্ষে আগাম জামিন চেয়ে ব্যর্থ হলে তারা ৮ সদস্যের পরিবার বিশেষ বিমান ভাড়া করে বিদেশে পালিয়ে যায়। ১. মিসেস সাবরিনা সোবহান, পাসপোর্ট নং বিআর-৯৫৮৯৪৩৮ ২. আহমেদ ওয়ালিদ সুবহান, পাসপোর্ট নং বিআই-৯৫১৪৬৮৩ ৩. আইরিশ আফরিন সোবহান, পাসপোর্ট নং বিজে-৫২৩১৬৯৯ ৪. ইয়েশা সোবহান, পাসপোর্ট নং কে-০০৪৭২৭৭৪ ৫. রানিয়া আফরোজা সোবাহান, পাসপোর্ট নং কে-০০৪৭২৭২১ ৬. দানিয়া হার্নান্দেজ কাকানান্দ, পাসপোর্ট নং পি-০২৪৮৪৮০বি ৭. মোহাম্মদ কাদের মীর, পাসপোর্ট নং ইএইচ-০৭৫৪৮৯ ৮. হোসনেআরা খাতুন, পাসপোর্ট নং ইই-০১৬৬৯১৬। এরা বিজনেস ফ্লাইটে দেশত্যাগ করেছেন।
এদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বহুল আলোচিত ঘটনার বিবাদী ও তাদের নিকট আত্মীয়রা বিদেশ পালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা লক্ষণীয়। এদের দায়িত্ব-কর্তব্য প্রশ্নবোধক।
বসুন্ধরা কোম্পানি কর্তৃক মানুষ হত্যা করার রেকর্ড পুরনো। তাদের টাকার কাছে, মিডিয়াগুলো বিজ্ঞাপনের কাছে বিকিয়ে যাওয়ায় অন্যান্য রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এমনকি গণমাধ্যমগুলো যদি অন্যায়গুলো নাদেখার ভান করে তবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে অন্যসব অপশক্তি, মাফিয়ারা। এতে করে দেশের আইন বিচার ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা দেখা যাবে অন্য গণমাধ্যম থেকে মানুষের আস্থা বিশ্বাস উঠে যাবে।
সাধারন জনগনের কাতারে দাঁড়িয়ে আমিও মুনিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেনো কোনো অপরাধি আইন বিচার ব্যবস্থাকে কোনোভাবেই ডিঙ্গিয়ে যেতে না পারে।