সাংবাদিকতা একটা মহান পেশা। সমাজকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে হলে অন্যান্য সেবার চেয়ে আরও অগ্রসর সেবার নাম সাংবাদিকতা। এ পেশায় থেকে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা যেভাবে রাখা যায় তা অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব নয়। তাই বলে কি অন্যান্য পেশার মানুষ সমাজ উন্নয়ন করে না? করে। তার চেয়ে বিরাট ভূমিকা রাখে সাংবাদিকতায় যারা থাকেন। এ পেশায় থাকলে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা অত্যধিক। একজন সংবাদকর্মী সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ছোটেন, কোথায় কোন জিনিসের অভাব রয়েছে, কোন জিনিসটার উন্নয়ন হচ্ছে না বা হয়নি, কোন জিনিস ভালোভাবে চলছে না, কে কি করছে, কোন পথে চলছে তা একজন সংবাদকর্মী হিসেবে চতুরদৃষ্টি দিয়ে খবর রাখতে হয়। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া নানা অসঙ্গতি তুলে আনতে হয় গণমাধ্যমে।
সাংবাদিকতা হচ্ছে মূল্যবোধসম্পন্ন পেশা। সাংবাদিকদের মধ্যে স্বাধীন চেতনার দৃঢ় অবস্থা থাকতে হবে। সাংবাদিকতার মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত-‘আমরা স্বাধীনভাবে জনগণের জন্য কাজ করবো।’ সরকার আমাদের সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। কোনো প্রলোভন কিবা রাজনৈতিক দলীয় মতে প্রভাবিত না হয়ে কাজ করে যাওয়াটাই হলো সত্যিকারের সাংবাদিকতা।
বর্তমান সংবাদ যেমন বেচাকেনা হয় তেমনি সাংবাদিকতা ও। এই মহান পেশা নিয়ে ব্যবসা করার হীন মানসিকতা নিয়ে বহু চাটুকার ঢুকে গেছে। বহু জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় কিবা রাজনৈতিক উত্থানের শক্তি হিসেবে গণমাধ্যমকে পুঁজি করে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রকৃত সংবাদ ও সাংবাদিকতা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
কার্ড বিক্রির দিকে নামধারী বহু গণমাধ্যম ঢুকে গেছে। একই এলাকায় বহু কার্ড বিতরণ করে মাস শেষে হাতানো হচ্ছে টাকা। এতে করে ওই কার্ডধারী নিজেও পণ্য হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বড় গণমাধ্যমগুলোর মফস্বলে অধিকাংশই রয়েছে নিজেদের ‘সিনিয়র’ পরিচয়দানকারী স্বল্পশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিবা অষ্টম শ্রেণি বা আন্ডারমেট্রিক লোকের দখলে। তাদের কাজ হচ্ছে লেখা কপি করা, অন্য সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা আর বিভিন্ন দপ্তরে হানা দিয়ে সুবিধা গ্রহণ করা। এতে করে ওইসব দপ্তরের যত অনিয়ম সব চাপা দিয়ে যাওয়াটাই ওসব সুবিধাভোগীদের কাজ। এরা নবীন সংবাদকর্মীদের কোনোভাবেই সহ্য করতে পারেন না কিবা লালন করতে চান না।
প্রকৃত সাংবাদিকরা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে চাটুকার, সুবিধাভোগী, তেলবাজরা মন্তব্য করে-‘ওরা বুঝি সুবিধা না পেয়ে সংবাদ করেছে! ওরা প্রতিষ্ঠানে গেলে কর্মকর্তা বুঝি তাদের সুবিধা দেয় নি, এজন্য নিউজ করে দিয়েছে!’ চোখ কপালে তুলে, মুখ ভেংচিয়ে এমনই বলে বেড়ায়।
প্রকৃত সাংবাদিকতার রুলে কিন্তু সাংবাদিক দালাল হিসেবে, পণ্য হিসেবে, দর-কষাকষি করা পরিয়া হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা উল্লেখ নেই।
প্রকৃত সাংবাদিক কখনোই বায়েস্ট হয়না। চাটুকারিতা, দালালি, তেলমারা বা হাওয়া নিউজ করা, রাজনৈতিক নেতার ছবির সাথে নিজের ছবি ঝুলানো, হুমকি-ধামকি দেয়া, অসংলগ্ন আচরণ করা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, অর্থ দাবী করা, দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে বসে থাকা, কর্মকর্তাদের তোয়াজ করা, বিভিন্ন সালিশ দরবার, থানায় দালালি করা, একসাথে সরকারি বেসরকারি চাকরি করা, টেলিফোনে বা মোবাইলে সুবিধা নেয়া, উপঢৌকন বা উৎকোচ গ্রহণ করা প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ নয়।
এইসব মুখোশধারীদের জন্যই আইসিটি আইন প্রণয়ন হয়েছে। যা প্রকৃত সংবাদ ও সাংবাদিকতার জন্য বড় হুমকি! প্রকৃত ত্যাগি নিষ্ঠাবান সাংবাদিকের গলার কাঁটা এই আইসিটি আইন।
অসৎ, হলুদ বা মুখোশধারী সাংবাদিকতা প্রতিরোধ করতে হলে আইসিটি আইনের বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যদি কোনো সংবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় বা উপরোল্লেখিত উপায়ে গ্রহণ করা হয়, তাহলে এর যথার্থ প্রয়োগ করা উচিত। তবে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিককে গ্রেপ্তার নয়।