করোনা ভাইরাসের কারণে দির্ঘদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে আধুনিক স্মার্ট মোবাইলে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
প্রাথমিক থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখন খেলায় আসক্ত হচ্ছে। অভিভাবকরা বাঁধা দিয়েও তা খুব একটা কাজে আসছে না। এতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
শুধু শহর নয়, উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এ দৃশ্য নিত্যদিনের। গ্রামের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অলিতে গলিতে উঠতি বয়সি শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও অনলাইন গেম খেলার দৃশ্য চোখের পড়ার মতো।
জানা গেছে, উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা ও যুব সমাজ দিন দিন ফ্রি ফায়ার এবং পাবজি নামক গেমের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা নিয়মিত পড়ালেখা নিয়ে ও খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির এই খেলায় জড়িয়ে পড়ে যেন নেশায় পরিণত হচ্ছে।
স্কুল বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সন্তানদের স্মার্ট ফোন কিনে দিচ্ছে আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উঠতি বয়সের যুবকরা প্রতিনিয়ত অ্যান্ড্রয়েড (স্মার্ট ফোন) দিয়ে এসব গেইমে আসক্ত হচ্ছেন। এসব বিদেশী গেম থেকে শিক্ষার্থী বা তরুণ প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে এক জন প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কর্মকান্ডের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে গ্যাং গ্রুপ।
শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ও খেলাধুলার মাঠ ছেড়ে ফেসবুক, ইউটিউব ও প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মকান্ডে তাদের সময় পার করছে। ইমো, ভাইবার, টুইটার ও হোয়াটস অ্যাপে নতুন নতুন ছবি আপলোড ও চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করছে। তৈরি করছে টিকটক ভিডিও।
সারাদিন এমনকি রাত জেগে ইন্টারনেটে খেলছে ফাইটিং ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো নেশা ধরা গেম। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে স্কুল, কলেজপড়ুয়ারা মোবাইলে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছেন, যা মাদকের চেয়ে ভয়ংকর।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে কিশোররা ইন্টারনেটে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে পড়ে আছেন। যাদের বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি উপজেলার একাধিক গ্রাম ঘুরে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে চায়ের দোকান, গাছতলা, রাস্তার ধারে,বাড়ীর পাশে ও মাঠের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
এছাড়া অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের তিন থেকে পাঁচজনে মিলে গেম খেলতে দেখা গেছে। একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে গেম খেলা অবস্থায় কথা বললে তারা জানান, স্কুল বন্ধ তাই সময় কাটানোর জন্য ইন্টানেটে গেম খেলি।
পৌর এলাকার পুর্ব কাঁটাবাড়ী গ্রামে খেলা চলাকালে কথা হয় ইউসুফ, দোলন, পারভেজ, সাগরসহ নানা বয়সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম খেলতে ভালোলাগে তাই খেলি, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যেখানে থমকে আছে সেখানে আমাদের মতো ছাত্ররা কী করবে, সারাদিন তো আর ঘরে বসে সময় কাটাতে পারি না।
স্কুল ও কোচিং বন্ধ একা একা বাসায় থাকাতে সময় যেন আর কাটে না, তাই অনলাইনে গেম ফ্রি ফায়ারে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি।
গেম খেলায় ফোনে মেগাবাইট কিনতে খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই গেম যখন বিনোদন নেওয়ার জন্য খেলতাম তখন মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মেগাবাইট খরচ হতো। এখন গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ওয়াই ফাই আসায় আগের চেয়ে খরচ একটু কমেছে। আগে মেগাবাইট ছাড়া অন্য কোনো খরচ ছিল না। ধীরে ধীরে যখন এটা ভালো লাগে তখন প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ না করলে যেন হয় না।
গেমটিতে পুরোপুরিভাবে মনোযোগ দিয়ে যখন খেলি তখন দেখি গেমের ভেতরে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো না কিনলে নয়। যেমন অলকের দাম ৪০০ টাকা, একটা জার্সি ৩০০ টাকা, নতুন ইভেন্টে আসলেই ২০০০ টাকার নিচে খরচ না করলে হয় না। সম্পূর্ণ ড্রেস কিনতে লাগে ১২০০ টাকা। অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে অনেকেই বলেন,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অলস মস্তিষ্কে শয়তানের বাসা বেঁধেছে পাবজি আর ফ্রি ফায়ার ইন্টারনেট ভিত্তিক গেমে।
সরকার যদি এধরনের গেইম আমাদের দেশে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এধরনের গেইম থেকে রেহায় পাবে সাথে লেখা পড়ায় মনোযোগী হবে এবং দেশ উন্নতির কোঠায় পৌছাইবে।
জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজ মন্ডল বলেন, আমাদের সময় আমরা অবসর সময়ে মাঠে বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পার করতাম,কিন্তু এখনকার যুগে তরুণ প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। গ্রামগঞ্জে মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘন্টার পর ঘন্টা গ্রুপ গেম খেলছে, এ যেন মহামারি আকার ধারণ করছে। ইয়ং জেনারেশন এখন ফ্রি ফায়ারের দিকে আসক্ত। যেটা কিনা একটা অনলাইন গেম সেখানে গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার আসর তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই সুযোগ পেলেই যথারীতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে আভিভাবকদের ফাঁকি দিয়ে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।