নাটোরের নলডাঙ্গায় পর্নোগ্রাফি মাদকের চেয়ে ভয়ংকর রুপে ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলায় পর্ণ ছবি এখন মহামারি ধারণ করেছে। উঠতি বয়সী যুবকদের কাছে এই ছবি সহজ লোভ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তরুণ ও যুবসমাজের একটি বৃহৎ অংশের কাছে,এখন মাদকের নেশার চেয়েও বেশি ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে,পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ ও দর্শন করা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নলডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে সহজেই মিলছে পর্ণ ছবি। উপজেলায় বিভিন্ন নামের প্রতিষ্ঠানে জমজমাট ব্যবসা চলছে। প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন সিনেমা, নাটক, বিভিন্ন ভিডিও মেরোরি কার্ড ও পেনড্রাইভে করে সহজে বহন করা যায় এবং এগুলো মোবাইলসহ টিভিতে দেখা যায়। এর সাথে অনেকেই কৌশলে পর্ণ ছবি নেয়,যা দেখে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা পর্ণে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং নিয়মিত পর্ণ ছবি ক্রয় করে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে,কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট,মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে,তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য সর্বেচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
উপজেলার পশ্চিম মাধনগর গ্রামের উড়তি বয়সী এক যুবক বলেন,গান লোডের দোকানে এই ব্যবস্যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এসব ছাড়া ব্যবসা চলেনা,কেউ লোড দিতে চায়না। ছেলেদের পাশাপাশি কৌশলে মেয়েরাও পর্ণোগ্রাফি লোড দেয়।
এসব পর্ণ ছবির ছোবলে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ডাউনলোডের অন্তরালে বিশেষ ইশারায় এসব পর্ণ ভিডিও মেমোরিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল।
উপজেলার আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু বলেন,মহামারির মতো নীল ছবি আমাদের সমাজে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া পড়াশোনায় অনেকেই অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে অভিভাবকরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তরুণদের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জেলা ও উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের ছোট-বড় হাট-বাজারে অসংখ্য স্থানে লোডের দোকান গড়ে ওঠেছে। এসব দোকানের অধিকাংশতেই অশ্লীল ভিডিও ও ছবির কালেকশন রয়েছে।
শিক্ষার্থী ও উঠতি বয়সের সন্তানদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে অভিভাবক মহল। দেশের অবৈধ এ পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও চিত্র মোবাইলের মেমোরিতে ধারণ ও বিপনণ ব্যবসা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একটি আইন থাকলেও সরকারের প্রনীত এ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে উপজেলার বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান ও ষ্টুডিওতে নির্ভয়ে চালানো হচ্ছে,অবৈধ অশ্লীল ভিডিও চিত্রের লোড কার্যক্রমের নীল ব্যবসা। হাতে হাতে স্মার্টফোন থাকায় এদের বেশিরভাগ কাস্টমার আবার কিশোর-তরুণ। মাত্র ১০-২০ টাকায় পর্ণ ছবি ও ভিডিও আপলোড করেন তারা।
নাটোরের নলডাঙ্গার শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ তোতা বলেন,উপজেলায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে কম্পিউটারের দোকান। যেখানে প্রকাশ্যেই মেমোরি লোডের মাধ্যমে নীল ছবির জমজমাট ব্যবসা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নয়তো দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের তরুন সমাজ।
নলডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষক কল্যান পরিষদের সভাপতি ও মাধনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন,উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা পর্ণে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং নিয়মিত পর্ণ ছবি ক্রয় করে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় তাদের নৈতিকতার অধঃপতন ঘটে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সহজেই জড়িয়ে পড়ে।
গোপন সূত্রে জানা যায়,ব্যবসায়ীরা ১টি হারডিস্ক লোডের জন্য ১০০-২০০ টাকা নিয়ে থাকেন। আর সেসব হারডিস্ক প্রতি সপ্তাহে,বিভিন্ন মাধ্যমে পৌঁছে যায় উপজেলার বিভিন্ন দোকানে। পর্ণ ছবি আপলোড করার জন্য একাধিক হারডিস্ক ও পেইনড্রাপে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানেই পর্নো ছবি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। আর হারডিস্ক ও পেইনড্রাপ রাখা হয় গোপন স্থানে। এসব পর্নো ছবি লোড করতে দোকানগুলোতে বিশেষ করে, বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর উঠতি বয়সের যুবক ও ছাত্রদের ভিড় লেগেই থাকে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।