চোখে মুখে হাসির ঝলক,বুকে স্বপ্ন নিয়ে বড় হওয়া নাসির উদ্দিন(৫০)। দুই সন্তানের জনক। নিরুত্তাপ দেহ নিয়ে দিনমান চলতে থাকা নাসির উদ্দিন এখন অনেকটাই হতাশায় জীবন অতিবাহিত করছে। রায়গঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত রওশনের বড় ছেলে সে।
ঘরে আরও দুই ভাই আছে। আছে বোন। বাবার মরণের পরই তার সংসার ভেঙ্গে তছনস হয়ে যায়। কোন এক ঝড়ে ক্ষতি হয়ে যাওয়া সে সংসারটি আর জোড়া লাগেনি। দুই সন্তানের মুখে বাবা ডাকও শোনেনা কতদিন। পৌরসভার এ গলি ও গলিতে পলিথিন কার্টুনের বেড়া দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ঘরেই তার এক যুগের বেশি সময় স্থায়ী বসবাস ।
দিনের আলোয় ঘুম ভাঙ্গলেও রাত শেষ হয় না তার জীবনে। এই বয়সেও দিনের আলোয় দস্যি ছেলের মত কার্টুন তালাশ করে দোকানে দোকানে। সেটা বিক্রি করে নিজের জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত সময় কাটায় সে। রাত হলেই একা একা অনর্গল এ কথা সে কথা বলেই নিজকে শান্তনা দেয়। দুঃখ দৈন্যতায় হারিয়ে যাওয়া জীবনটা আর ফিরিয়ে আনতে পারছে না সে। নিজের প্রিয় দুই সন্তানকেও গড়ে তুলতে অপারগ।
প্রচন্ড শীত কিংবা ঝড়েও কোন দোকানের বারান্দায় অস্থায়ী ঘরে জীবন যাপন তার। নিয়মিত খাবার পায়না বলে দেহটাও শক্তি হারিয়ে ফেলছে।
কেমন আছো জানতে চাইলেই বলে উঠে,তোমাদের মত না ভাই। আমি গরীব মানুষ কেমন থাকি।
ছেলে বেলায় স্থানীয় বিদ্যাপিঠে শিক্ষা জীবন শুরু হলেও অভাবের সংসারে মাঝ পথে থেমে যায় সে অধ্যায়। কিন্তু এক সময় শহুরে থাকা নাসির উদ্দিন এখনও কথা বলেন শুদ্ধ ভাষায়।
প্রচন্ড শীতে মাত্র একটা কম্বলের নিচে লুকিয়ে রাখা দেহটি শীতল হলেও কাউকে বলেনা তার চাহিদার কথা। পৌর সমাজের বিত্তবানরা অনেকেই তার নিকটাত্মীয় হলেও কেউই খোজ নেয় না আজকাল। আজ সন্ধ্যায় তার ছবিটি তুলতে গিয়ে দেখা গেলো সে ঘুমিয়ে আছে।
ডাক কানে যাওয়া মাত্র উঠে বলে উঠলো ভাইরে,শরীরটা ভাল যাচ্ছে না বলেই শরীরটা আবার এলিয়ে দিলো। বিছানায়।
এখন সে কিছুটা নেশা করে । সব ভুলে থাকার কৌশল এটা৷ অন্তত তার কাছে। সারাদিনের উপার্জন দিয়ে কিছু খাওয়া ও বাকী টাকায় নেশা।
বৌ সংসার সন্তান সব ভুলে থাকতে চায় সে। ভালবাসার প্রসঙ্গ উঠলেই চোখের কোনে জমে উঠে জল। অপরিচ্ছন্ন হাতের তালু দিয়ে মুছে দেয় চোখের জল। সে জলে তার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে দেখে সে।
অস্থায়ী ঘরের স্থায়ী বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের কাছে সংসার নিজের স্বপ্ন আর আগামীর কথা জানতে চাইলে হেসে দিয়ে বলে উঠে “একটু সকাল হোক,রোদ উঠুক”।